বাংলাদেশের
বেশিরভাগ মেয়েরই ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। রুনা
আখতারের বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখনই তার বাবা-মা তাকে তার থেকে দ্বিগুণ
বয়সের এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত
রুনা কোনো অফিসে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করার স্বপ্ন বুনে চলেছে।
সবে মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে পড়া এবং খেলাপ্রিয় মেয়েটি বিয়ের জন্য তার বয়স ২১ বছর হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে চেয়েছিল।
কিন্তু তার বা-মায়ের ভাবনা ভিন্ন ছিল।
‘মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তার স্বামীকে কনডম পরার কথা বলেছিলাম আমি। -রুনার মা’
জহরুল হক কাজল নামের ২৯ বছর বয়সী দ্বিগুণ বয়সের এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে
দেওয়া রুনার মা বিশ্বাস করেন, বয়স বেশি হয়ে গেলে মেয়ে বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে
যাবে। আর মেয়ের বয়স বেশি হয়ে গেলে লোকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলবে।
তার মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, রুনার বিবাহ তাকে রক্ষা করবে। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বয়স কম হওয়ায় তার স্বামীকে কনডম পরার কথা বলেছিলাম আমি।’
বাংলাদেশে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি দুটোই
গুরুতর সমস্যা। আর তরুণীদের এসব সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য যুগ যুগ ধরেই
শিশুবিবাহকে নিরাপদ উপায় হিসেবে দেখা হয়। যেহেতু বিয়ের পর তাদের স্কুলে
যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, এটি তাদেরকে যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করে।
চাঁদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং
নাইজারের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শিশু বিবাহের হার সবচেয়ে বেশি।
বযস ১৫ হওয়ার আগেই দেশটির এক তৃতীয়াংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আর ১৮ বছর হওয়ার
আগেই বিয়ে হয়ে যায় দুই-তৃতীয়াংশ কন্যা সন্তানের। যদিও বাংলাদেশে নারীদের
বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ২১।
তাড়াতাড়ি বিয়ে করার পরিণতিও নাটকীয়।
বেশিরভাগ মেয়েই স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। আর বয়স ১৫ হওয়ার আগেই গর্ভবতী হওয়া
মেয়েগুলো সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু
অন্যদিকে ২০ বা তদুর্ধ্ব বয়সে বিয়ে হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম
দেওয়ার সময় এ ঝুঁকি থাকে না।
১৩ বছর বয়সী মেয়েটিকে তার বোন এবং
বন্ধুদের সাথে খেলা ফেলে হঠাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘের মধ্যে হারিয়ে যেতে হলো।
তার মধুর শৈশবকাল যে নিমিষেই বিলীন হতে চলেছে এবং তার পরিবর্তে স্ত্রী
হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনের সময় হয়ে গেছে এটা জানলে হয়তো তখনই সে বিয়ে করতে
আপত্তি জানাত।

0 comments:
Post a Comment